Thumbnail image

কিশোর কালে যা হয়

প্রীতম এর ক্লাস ১২। সামনে উচ্চমাধ্যমিক। পড়ার চাপ অনেক। মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। “এতদিন শুধু ঘুরে আড্ডা মেরে কাটিয়ে দেওয়া গেছে, এখন পড়া ছাড়া গতি নেই।” কিন্তু মন মানতে চায় না। পড়তে আর ইচ্ছে ও করে না। একবার পুজোতে পাওয়া নতুন মোবাইল টার স্ক্রীন টা আনলক করে দেখলো প্রীতম। নাহ্, কোনও পেন্ডিং এসএমএস বা মিসড কল নেই। প্রিয়ারও না। মায়ের বকুনির চোটে সারাদিন সাইলেন্ট মোডেই দিয়ে রাখতে হয় ফোন টাকে। ভাবলো একবার প্রিয়া কে ফোন করবে। কিন্তু সেটাও ইচ্ছে করলো না। প্রিয়া যেরকম পড়ে, এখনও হয়ত বই মুখে নিয়ে বসে আছে। ওদিকে মায়ের গলা ভেসে এল, “ওরে সামনে পরীক্ষা। এতদিন তো ড্যাং ড্যাং করে ঘুরে বেড়ালি, এবার একটু গা লাগিয়ে পড়।” মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার পড়া শুরু করল প্রীতম। বলতে ইচ্ছে করল, “সারা বছর না পড়ে এখন যতই পড়ি কিস্যু হবে না।” স্নান করার সময় হয়ে এল। স্নান করতে, খেতেও যেন ইচ্ছে নেই তার। তবু ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাহোক একটু খেলো প্রীতম। তারপর সেই একঘেয়ে পড়া। সন্ধেতে টিউশন ছিল, স্যার পড়াবেন না বলেছেন। তাও যা একটু বন্ধু দের সাথে দেখা সাক্ষাত হত, সেটাও হবে না। বিরক্ত লাগছিল তার। প্রিয়াও পড়তে আসতো। তার সাথেও দেখা হবেনা। প্রিয়া তার খুবই কাছের কেউ, কে সে নিজেও জানে না। মা মাঝে মাঝে ইয়ার্কি মেরে বলে গার্লফ্রেন্ড। জানে না প্রীতম প্রিয়া তার কে হয়। কিন্তু এটা বোঝে যে, প্রিয়া কে ছাড়া সে অচল। বাবা-মারও প্রিয়ার প্রতি আলাদা দুর্বলতা আছে। বাড়িতে প্রিয়ার কদর যেন তার থেকেও বেশী। এটা দেখতেই সে অভ্যস্ত, খুশিই হয় সে দেখে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ডোরবেলের শব্দ এল। মন ছিল না পড়ার দিকে। গলা টা চিনতে পারলো প্রীতম। প্রিয়া! এখন?! কি ব্যাপার! প্রীতম উঠে যাওয়ার আগেই প্রিয়া ঢুকে পড়ল তার ঘরে। বলে উঠলো, “ড্রেস আপ কুইক, যাওয়ার পারমিশন পেয়ে গেছি।” ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে প্রীতম দাঁড়িয়ে রইল। প্রিয়া আবার তাড়া দিল।প্রিয়ার সাথে বেরিয়ে যাওয়ার সময় দেখল মা কিছুই বলল না, শুধু একটু হাসলো। বাবা বলল শুধু, “বেশি দেরি করিস না, ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে ফিরিস কিন্তু।” অবাক প্রীতম সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে জিজ্ঞেস করলো, “কি ব্যাপার বলতো, তোর সাথে এই রা্তে বেরিয়ে যাচ্ছি, কেউ কিছুই বলল না!” প্রিয়া শুধু বলল, “ওরে পাগলা, আজ যে ৩১শে ডিসেম্বর। বছরের শেষ দিন!” তারপর? তারপর আর কি! কিশোর কালে যা হয়!

Related Posts